যে কোনো দেশের অর্থনীতির চাকা সুচারুভাবে চালাতে সুস্থ ও সমৃদ্ধ ব্যাংকিং খাত আবশ্যক। গত তিন দশকে বাংলাদেশে অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং খাতেরও বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু ওই বিকাশ সুস্থধারায় প্রবাহিত হয়নি। এর প্রমাণ হলো প্রতিবছর বেড়ে যাওয়া খেলাপি ঋণ। এক কথায় খেলাপি ঋণে জর্জরিত হয়ে আছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এমনকি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যথাসময়ে ফেরত দিচ্ছে না সরকারি সংস্থাগুলোও। ফলে দিন দিন সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৩০টি সরকারি সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। মূলত নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক অবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছে না। উল্টো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লোকসানের ঘানি টেনে যাচ্ছে সরকার। ফলে বছরের পর বছর ব্যাংকের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকিং খাতে আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি প্রায় নির্বাসিত। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে আইনের সীমাবদ্ধতা যেমন আছে, তেমনি আছে নজরদারির ঘাটতিও। অবিলম্বে এসব খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিস্তি অনুযায়ী পাওনা আদায় করা হোক এবং সরকারি মাল দরিয়ায় ঢাল- এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির কারণে লোকসানে নিমজ্জিত হয়েছে, সরকারের উচিত সেসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং এসব দুর্নীতির লাগাম টানা। এ বিষয়ে যত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, ততই মঙ্গল।